ভক্তি, ইতিহাস ও প্রকৃতির মিলনস্থল—তেলেঙ্গানার যদগিরিগুট্টার শ্রী লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দির - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, August 14, 2025

ভক্তি, ইতিহাস ও প্রকৃতির মিলনস্থল—তেলেঙ্গানার যদগিরিগুট্টার শ্রী লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দির


 ভক্তদের হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর মতোই একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে তেলেঙ্গানার যদগিরিগুট্টা পাহাড়ের উপর অবস্থিত শ্রী লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দির। হায়দ্রাবাদ থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই আধ্যাত্মিক কেন্দ্রটি ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারের প্রতি নিবেদিত। ভক্তি ও প্রকৃতির অপূর্ব সঙ্গমে ভাস্বর এই মন্দিরকে অনেকেই ‘তেলেঙ্গানার তিরুপতি’ বলে আখ্যা দেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার ভক্ত এখানে এসে দর্শন-পূজা, লক্ষ তুলসী পূজা ও অভিষেকের মতো পবিত্র আচার পালন করেন।

প্রাচীন কিংবদন্তি ও ঐতিহ্য

স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, ত্রেতা যুগে মহান ঋষি যদ ঋষি এই পাহাড়ে কঠোর তপস্যা করেছিলেন। হনুমানের কৃপায় তাঁর ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান নৃসিংহ পাঁচটি রূপে আবির্ভূত হন—জোয়ালা নৃসিংহ, যোগানন্দ নৃসিংহ, গণ্ডবেরুন্ড নৃসিংহ, উগ্র নৃসিংহ ও লক্ষ্মী নৃসিংহ। ঋষির অনুরোধে এই পাঁচটি রূপ স্থায়ীভাবে এখানে বিরাজমান হন, যা আজও মন্দিরের গুহায় পাথরে খোদাই করা অবস্থায় বিদ্যমান।

অন্য এক কিংবদন্তিতে বলা হয়, হনুমানের নির্দেশে ভগবান নৃসিংহ পাহাড়ের নিচে এক পবিত্র স্থানে যদ ঋষির কাছে আবির্ভূত হন। সেই স্থানেই আজ একটি ছোট মন্দির রয়েছে।

স্থাপত্য ও সৌন্দর্য

মন্দিরটি ১২ ফুট উঁচু ও ৩০ ফুট লম্বা প্রাকৃতিক গুহায় নির্মিত, যার স্থাপত্য দ্রাবিড় রীতি ও আগম শাস্ত্র অনুসারে গড়া। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের সময় কালো গ্রানাইট (কৃষ্ণশিলা) ব্যবহার করা হয়েছে। সাতটি দৃষ্টিনন্দন গোপুরম, মণ্ডপ ও ১২টি আলভারের স্তম্ভ মন্দিরের শোভা বৃদ্ধি করেছে। গর্ভগৃহে লক্ষ্মী নৃসিংহের রূপার মূর্তি এবং অন্য চারটি রূপের পাথরের মূর্তি বিদ্যমান। কমপ্লেক্সে হনুমান মন্দির ও গণ্ডবেরুন্ড নৃসিংহ মন্দিরও রয়েছে।

উৎসব ও আচার

সারা বছর ধরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে এই মন্দিরে। ব্রহ্মোৎসবম (ফেব্রুয়ারি-মার্চ), নরসিংহ জয়ন্তী ও বৈকুণ্ঠ একাদশীতে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনের সুযোগ রয়েছে। সুপ্রভাত সেবা, সহস্রনাম অর্চনা ও প্রসাদ বিতরণ এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা

যদগিরিগুত্তা সড়ক ও রেলপথে ভালোভাবে সংযুক্ত। হায়দ্রাবাদ থেকে ১৬৩ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে প্রায় দুই ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। নিকটতম রেলস্টেশন রায়গিরি (৫ কিমি) ও ভোঙ্গির (১৩ কিমি)। রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। ভক্তদের জন্য অতিথিশালা, বেসরকারি হোটেল ও ধর্মশালা—সবই এখানে সহজলভ্য।

কলকাতা থেকে যদগিরিগুট্টা মন্দির ভ্রমণ

কলকাতা থেকে তেলেঙ্গানার শ্রী লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দির যেতে দ্রুততম উপায় বিমানপথে—প্রায় ২ ঘণ্টায় হায়দ্রাবাদ, তারপর সড়কপথে ৯০ কিমি। রেলপথেও ভোঙ্গির (১৩ কিমি) বা রায়গিরি (৫ কিমি) স্টেশন হয়ে পৌঁছানো যায়। সড়কপথে হায়দ্রাবাদ হয়ে জাতীয় সড়ক ১৬৩ ধরে প্রায় ২ ঘণ্টায় মন্দিরে পৌঁছানো সম্ভব।

শ্রী লক্ষ্মী নরসিংহ স্বামী মন্দির শুধু ধর্মীয় আস্থা নয়, ইতিহাস, স্থাপত্য ও প্রকৃতির এক অসাধারণ মিলনস্থল—যা ভক্ত ও পর্যটক উভয়ের জন্যই এক অনন্য গন্তব্য।


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad